ঈদ কার্ডের একাল-সেকাল

ঈদ কার্ডের সময়টা বদলেছে। এক সময় পাড়া বা মহল্লায় যেমন ঈদ কার্ডের দোকানে যে ভিড় দেখা যেত সেই ভিড় এখন আর নেই। ডিজিটাল সময়ের সাথে সাথে বদলেছে ঈদ কার্ডের ধরনটাও। রোজার ঈদের আগে পুরো রমজান মাসজুড়ে ঢাকার নিউমার্কেট, পল্টনে বিভিন্ন বড় বড় ঈদ কার্ডের দোকানের ভিড় এখন আর দেখা যায় না।

সময়র সাথে সাথে ঈদ কার্ডের প্রচলন অনেকটাই কমে গেছে। ঈদ কার্ড এখন আর আগের মতো মর্যাদা পায় না। অলিগলিতে এত দোকানও বসে না আর আগের মতো। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে মানুষও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। কার্ড কিনে নিজের হাতে ২ লাইন লেখার চাইতে মোবাইলের কি-প্যাড আর কম্পিউটারের কি-বোর্ডে লিখতেই সবাই এখন স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে একটি ম্যাসেজ লিখে সবাইকে ফরওয়ার্ড করা অথবা ফেসবুকে একটি ‘ঈদ মোবারক’ লেখা ছবিতে সবাইকে ট্যাগ করে দেওয়াটা বর্তমানে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু হাতে লেখা কার্ডের সাথে কি আর অনলাইন উইশের তুলনা হয়! সেটা ক’জনই বা ভাবছি আমরা!

শাহবাগের আজিজ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে হাতে বানানো কার্ড পাওয়া যায়। কার্ডে একটু শৈল্পিক ছোঁয়া পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন এসব দোকানে। এছাড়াও অনেক হ্যান্ডিক্রাফটের দোকানে একটু খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন হাতে বানানো এসব কার্ড। আর আপনি চাইলে কম খরচে নিজের হাতেও কার্ড বানিয়ে দিতে পারেন। নিজের হাতে বানানো কার্ডের আবেদন নিঃসন্দেহে কেনা কার্ডের তুলনায় অনেক বেশি।

১০ বছরের এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে নাফার সাথে কথা হলো ঈদ কার্ডে নিয়ে। একটি পরিচিত কার্ডের দোকানে তার মায়ের সাথে এসেছে। ঈদ কার্ড কিনতে এসেছে কি-না জানতে চাওয়া হলে সে মনে হয় একটু চমকেই যায়। বন্ধুদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা আদান-প্রদান করে থাকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে। কখনো বা তা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে। কারণ এখন ঈদের শুভেচ্ছার মূল অংশ থাকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদে বার্তা ও অ্যাপসভিত্তিক শুভেচ্ছা।

এন্ড্রোয়েড মোবাইল যারা ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য ঈদের প্লে-স্টোরেই রয়েছে অজস্র ঈদ কার্ডের অ্যাপ। এটা এখন অনেকটা আউটসোর্সিংও বলা যায়। আগে যেমন দোকানে বসে ঈদ কার্ড বিক্রি হতো। সেই ঈদ কার্ড এখন মনিটরের সামনে প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। প্রোগ্রামের কাজ যারা পারেন তারাই মূলত এমন আউটসোর্সিংয়ের কাজগুলো করে থাকেন। শুধু গুগলেই নয়। ফেসবুকে এখন অনেক ধরনের অ্যাপ পাওয়া যায়, যার মধ্য দিয়ে ঈদের সময় প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে থাকেন অনেকে।

ঈদ কার্ডের প্রচলনটা এখন শুধু অতীত বলা যায়। কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঈদ শুভেচ্ছা পাঠানো ছাড়া এখন আর ঈদ কার্ডের প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে।